সৌমেন মজুমদার, তালা: অসমাপ্ত বেড়িবাঁধ নিয়ে তালার জনমনে আতংক দেখা দিয়েছে।
তালা উপজেলার কপোতাক্ষ নদীর পাড়ের এক অংশ বালিয়া ভাঙনকূলে ৪ কোটি ৮২ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ক্ষুদ্রাকার বেড়িবাঁধ। তবে অপরিকল্পিত আর দায়সারা মানহীন এ বাঁধ কোন কাজেই আসবে না বলে স্থানীয়দের দাবি। ফলে নদীর পাড়ের মানুষের মাঝে আতংক রয়েই গেল। প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় সিডর ও আয়লায় ক্ষতি হয়েছিলো সাতক্ষীরার অন্যান্য উপজেলার মত তালা উপজেলাতেও। এ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে প্লাবন হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তার মধ্যে বালিয়া ভাঙনকুল উল্লেখযোগ্য। এতে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও শতশত বিঘা জমির পাকা ধান এবং হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের তলিয়ে ঘটেছিলো এলাকার মানুষের সর্বস্বান্তের ঘটনা।
এই সংকট কাটাতে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের ৪ কোটি ৮২ লাখ ২৩ হাজার ১৯১ টাকা ব্যয়ে উপজেলার বালিয়া, ডুমুরিয়া, শাহাজাতপুর ও খেশরা এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙনরোধ ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ৫২ টি এলসিএস দলের অধীনে ১১০০ শ্রমিকের ৪ মাসের মধ্যে টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। যার মধ্যে ১২ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ এবং ৭.৫ কিলোমিটার খাল খননের কাজ ছিলো। এছাড়া ঠিকাদারের মাধ্যমে ৩টি রেগুলেটর, ৪টি পাইপ সুইস এবং সমিতির অফিস ঘর নির্মাণ কাজ উল্লেখ করা হয়। যেটি বাস্তবায়নে বালিয়া ভাঙনকূল (এসপি নং-৬১০০১) সাব প্রজেক্ট হাতে নেন। যা ঐ বছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি শেষ করা হয়নি। তবে যেটুকু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট নন এলাকাবাসী। কারণ অপরিকল্পিত এবং মানহীন বাঁধ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন তারা। কাজের বিপরীতে ৩০ শতাংশ টাকা উত্তোলন হলেও বিল পাননি এমনি অভিযোগ এলসিএস দলের। তবে এ কাজে অনিয়মের জন্য এলসিএস দলের একটি বড় অংশ অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বালিয়া ভাঙনকুল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতির দিকে। দুর্নীতির মধ্য দিয়ে কাজ শেষ না করেও সম্প্রতি আরও একটি বিল উত্তোলন করা হচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে যে ভাবে বাঁধটি দেওয়া হয়েছে তাতে জলোচ্ছ¡াস বা প্লাবন হলে সহজেই বাঁধটি ধুয়ে আবারও চলে যাবে নদীগর্ভে। কাজে আসবে না মানুষের। ফলে অপচয় হবে সরকারের অর্থ। তবে এই বাঁধে স্থানীয়দের দাবি ছিলো সমিতির লোকজন দিয়ে ঝুড়ি-কোঁদালের মাধ্যমে কাজ করলে বাঁধটি টেকসই হবে। আবার বাঁধটি দেওয়ার সময় সিড়ি আকারে উঠানো এবং বাঁধের উপরে ঘাস লাগানোর কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। পরিকল্পিতভাবে সিড়ি আকারে বাঁধ দিয়ে ঘাস লাগালে বাঁধটি স্থায়ী হতো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ব্যস্ততার জন্য এসকেভেটর দিয়ে কাজ করা হলেও কেন আজও সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হলো না এমন প্রশ্ন করেছেন তারা। বর্তমানে প্রকল্পের কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঠিক তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক রাজিব হোসেন রাজু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ প্রকল্পের কাজে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কিন্তু প্রকল্প সভাপতি কোন দিন কোন ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদকে অবহিত করেননি। তিনি নিজের মত নিজে করেছেন। সমিতির সদস্যদেরও তার এই কাজের প্রতি অভিযোগ রয়েছে।
প্রকল্পের উদ্যোক্তা বালিয়া ভাঙনকুল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম জানান, কাজ সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু, এখনও বিল পাওয়া যায়নি। ২০১৮ সালে ৩০ মে ফাইনাল বিল জমা দেওয়ার আবেদন করেছি কিন্তু, তার সমাধান এখনও না করে ঢাকা থেকে সার্ভের টিম এসেছিলো। তারা আবারও আমাকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন। বিলা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে আছি।
তালা উপজেলা প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ মোঃ জসিম জানান, প্রকল্পের কাজে কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তবে এটাও উল্লেখ করা আছে যে, খুব স্বল্প সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু সেটি এখনও শেষ করা হয়নি মর্মে এলাকাবসীরও অভিযোগ রয়েছে।